বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে সিরিজ : লিটন সাকিবের অনবদ্য পারফরম্যান্সে বড় জয় পেল বাংলাদেশে ক্রিকেট দল। এ জয়ের ফলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। খেলার ওপেনিংয়ে নেমে দলের উইকেট পরতে থাকলেও নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন লিটন। এর ফলে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ সংগ্রহ হয় ২৭৬ রান। ২৭৭ রানের লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে । বোলিংয়ে এসে সাকিব আগুন ঝরা স্পিনে তুলে নেন ৫ উইকেট । শুরুতে দলীয় ৪ রানে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ফিরে যান মারুমানাই (০)। এরপর তাসকিন আহমেদ ১৩ রানে ওয়েসলি মাধভেরেকে (৯) ফিরিয়ে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটান। খুব তাড়াতাড়ি ২ উইকেট পরার পর অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর আর অভিষিক্ত ডিওন মেয়ার্স দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না । ১৮ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে ৩৬ রানেই জুটির অবসান ঘটান পেসার শরীফুল। এই তিন পেসারের বোলিংয়ের পর আসেন সাকিব আল হাসান।
নিজের স্পেলের শুরুতেই জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরকে (২৪) তাসকিনের তালুবন্দি করান সাকিব। এছাড়া রায়ান বার্লকেও (৬) আফিফের তালুবন্দি করেছেন সাকিব। বাংলাদেশের বিপক্ষে বল হাতে ৩ উইকেট নেওয়া লুক জঙ্গুই (০) রান-আউট হয়ে যান। এরপর মুজরাবানিকে (২) লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে তৃতীয় শিকার ধরেন সাকিব।
এভাবে উইকেটের যাওয়া আসার মাঝেও ৪৭ বলে ঝড়ো ফিফটি তুলে নেওয়া চাকাভাকে ৫৪ রানে ফিরিয়ে চার নম্বর শিকার ধরেন সাকিব। তার পঞ্চম শিকার রিচার্ড এনগ্রাভা (০)। এদিকে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পাওয়ায় টিমিসেন মারুমার পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব হয়নি। তাই ২৮.৫ ওভারে মাত্র ১২১ রানে শেষ হয় জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। শুরুতে একের পর এক উইকেট হারালেও দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। এদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও আগলে রাখেন আরেক দিক।
ব্যাটিং ইনিংসে শুরুতে মাত্র ৫৭ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে বিপাক পরে বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শুরুতে ব্যাট করতে আসা তামিম ইকবাল। পেসার মুজারাবানির লাফিয়ে উঠা বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা হয়। তিন নাম্বারে এসে দলের আশা জাগান সাকিব আল হাসান। কিন্তু বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে রায়ান বার্লে তালুবন্দি হন মুজারাবানিকে উইকেট উপহার দেন সাকিব । ২৫ বলে তিন চারে ১৯ রান করে ফেরেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
তৃতীয় উইকেটের জুটিতে দলকে আশা দেখান মোহাম্মদ মিঠুন। তবে । ১৯ বলে ১৯ রান করে তামিমের মতোই উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে বন্দি করে তাকেও সাজঘরে ফেরান স্বাগতিক পেসার টেন্ডাই চাতারা। এরপর মাত্র ৫ রান করে দলীয় ৭৪ রানের মাথায় পেসার এনগারাভারের বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সৈকত।
চার উইকেটইয়ে পরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ওপেনার লিটন দাস দলীয় শতক তুলে নেয় । ২৯তম ওভারের ষষ্ঠ বলে চার মেরে ফিফটি করেন লিটন দাস। এই দুই জনের গড়া ৯৩ রানের জুটিটি ভাঙেন লুক জংউই। ৫২ বলের লড়াকু ৩৩ রানের ইনিংস খেলার পর রিয়াদকে সাজঘরে ফেরান লুক জংউই । এরপরে আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়েেই ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। সেঞ্চুরি করার খানিক পরই ১১৪ বলে আট চারে ১০২ রান করে এনগারাভার শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর শেষের দিকে নতুন ব্যাটসম্যান মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে দ্রুত রান তোলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। এই দুইজনের ৫৮ রানের জুটি ভাঙেন জংউই। শুরুতে মিরাজ এবং পরের বলে আফিফকেও ফেরান এই পেসার। মিরাজ ২৬ ও আফিফ ৪৫ রান যোগ করেন। শেষ ওভারে সাইফউদ্দিনের অপরাজিত ৮ রানে ভর করে ২৭৬ রান তোলে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের হয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন লুক জংউই।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: জিম্বাবুয়ে
বাংলাদেশ: ২৭৬/৯ (ওভার: ৫০; লিটন- ১০২, তামিম- ০, সাকিব- ১৯, মিথুন- ১৯, মোসাদ্দেক- ৫, মাহমুদউল্লাহ- ৩৩, আফিফ- ৪৫, মিরাজ- ২৬, সাইফউদ্দিন- ৮) (জঙ্গে- ৯-০-৫১-৩, মুজারাবানি- ১০-২-৪৭-২, রিচার্ড- ১০-১-৬১-২)
জিম্বাবুয়ে: ১২১/১০ (ওভার: ২৮.৫; মাধেভেরে- ৯, টেইলর- ২৪, মেয়ার্স- ১৮, চাকাভা- ৫৪) (সাকিব- ৯.৫-৩-৩০-৫, সাইফউদ্দিন- ৪-০-২৩-১, শরিফুল- ৬-০-২৮-১, তাসকিন- ৫-০-২২-১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ১৫৫ রানে জয়ী।