তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে লাথি মেরে বাচ্চা নষ্ট, গর্ভপাত এবং নির্যাতনের পর তার মেয়েকে জোরপূর্বক কানাডা পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন পুত্রবধূ মাধবী আক্তার নীলা। শুক্রবার আরামবাগে নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করে মোয়াজ আরিফের স্ত্রী নীলা। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ ।
সংবাদ সম্মেলনে মাধবী আক্তার নীলা বলেন, এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফের সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমার বিয়ে হয় ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ । বিয়ের পর স্বামী-সন্তান নিয়ে আমি সুখেই ছিলাম। বর্তমানে আমার বড় মেয়ের বয়স দুই বছর। সুখের সংসারে সমস্যা শুরু হয় আমার বড় সন্তানকে নিয়ে। আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি আমার বড় মেয়েকে কানাডায় তাদের মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমার ননদের কোনো সন্তান না থাকায় তারা আমার সন্তানকে কানাডা পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। এ
রপর থেকেই আমার ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন শুরু হয়। আমি দুই সন্তানের জননী। তবে এর আগে গত বছর অন্তঃসত্ত্বা থাকা অবস্থায় আমার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমার পেটে লাথি মেরে বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেন। পরবর্তী সময়ে ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তিতে সহায়তা করে। সে সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার ডিএনসি করে।
হাসান আরিফের পুত্রবধূ নীলা আরও অভিযোগ করে বলেন, অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেই আমি তৃতীয়বারের মতো অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরে অন্তঃসত্ত্বা হই। তৃতীয়বারের মতো আমার অন্তঃসত্ত্বার খবর স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি জানার পরই গর্ভপাত করতে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আমি কোনোভাবেই তাদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করিনি। এক পর্যায়ে তারা আমাকে বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে জোর করেন। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় শ্বশুর-শাশুড়ির নির্দেশে আমাকে সেদিন অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন স্বামী মোয়াজ আরিফ। নির্যাতনের সময় আমি ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম।
তিনি আরও বলেন , এ এফ হাসান আরিফ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ায় আইনের অপব্যবহার করে নয় মাস অন্তঃসত্ত্বা থাকাবস্থায় তাকে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । তার আইনজীবী জামিনের জন্য বার বার আবেদন করেও জামিন করাতে ব্যর্থ হন। অবশেষে কারাগারে থাকা অবস্থায় গত মাসের প্রথম সপ্তাহে পুলিশি হেফাজতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এর পর দিন জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। তারপর হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মোয়াজ আরিফের স্ত্রী নীলা আরও অভিযোগ করে বলেন , বর্তমানে আমার দুই বছরের সন্তানকে জোর করে আলাদা রেখেছেন তারা। আমি বার বার আমার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও পারিনি। আমার দাবি, সন্তান এখনও অনেক ছোট। যখন ও বুঝতে পারবে তখন তাকে নিয়ে যাক। এখন তো কথাও বলতে পারে না। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। এছাড়া শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন থেকে মুক্তি চেয়ে স্বামী-সন্তানের সুখের সংসার ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাইছি। এ প্রসঙ্গে জানতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য এর আগে গত জুন মাসে নির্যাতন, ভ্রুণ হত্যা ও দুই বছরের সন্তানকে আটকে রাখার অভিযোগে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন নীলা। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় মামলাটি দায়ের করেন তিনি। যদিও সে সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মোয়াজের বাবা হাসান আরিফ। তিনি দাবি করে বলেছিলেন যে নীলা আগের বিয়ের তথ্য গোপন করে মোয়াজের সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ে করেন। এটি তার চতুর্থ বিয়ে। তাকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে।
এ দিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে নীলার স্বামী মোয়াজ আরিফে মোবাইলে কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি । তবে তার বাবা হাসান আরিফ তার মুখপাত্র অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল নোমানের মাধ্যমে জানান, নীলার প্রতিটি অভিযোগ মিথ্যা। এ বিষয়ে রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে আইন আমলে নেওয়া হবে এবং যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সব নেওয়া হবে।