বাড়ি বাংলাদেশ জাতীয় আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব

আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব

2
আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব

আম প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে একটি প্রকল্পে। প্রকল্পটির প্রস্তাব দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, উৎপাদিত আমের ২০ থেকে ৩০ শতাংশই নষ্ট হচ্ছে সংগ্রহের সময়। তাই ‘ভ্যাপর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ স্থাপনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে আমের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। আমের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ১০ কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ৬০ লাখ টাকার প্রস্তাব করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রস্তাবনায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উপস্থাপনার জন্য কার্যপত্র তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সরকারি অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বিদেশ প্রশিক্ষণ বাবদ ৬০ লক্ষ টাকা ডিপিপি থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

কার্যপত্রে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ভ্যাপর হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ১২ কোটি টাকা প্ল্যান্টের ইক্যুইপমেন্ট বাবদ ব্যয় করা হবে। এ খাতে মোট ২০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই। এ ধরনের প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ বেসরকারি উদ্যোগে হওয়া সমীচীন হবে। সরকার সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন।

ডিপিপিতে আমের ভ্যালুচেইন ও সংগ্রহত্তোর অপচয় বিশ্লেষণ আইটেম বিষয়ে পরামর্শক নিয়োগের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই বিষয় নিয়েও পিইসি সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে বলে জানায় কমিশন। প্ল্যাট নির্মাণের জন্য ৬০ শতক জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিপিপিতে সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ধরে বাজারমূল্য নির্ধারিত জমির শ্রেণী উল্লেখ করা হয়েছে ‘আমবাগান’। আমবাগানের ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। এ বিবেচনায় একটি আমবাগানের জমি অধিগ্রহণ সমীচীন নয় বলে জানায় কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বলেন, প্রকল্পের এখনো পিইসি সভা হয়নি। সভা ডেকেছিলাম কিন্তু কোভিডের কারণে সভা বাতিল হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাষ্পীয় পদ্ধতিতে আম প্রসেসিং করা যাবে। প্রকল্পের আওতায় ৬০ লাখ টাকা বিদেশ ভ্রমণ প্র্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব বলেন, কোভিডের কারণে বিদেশ যাত্রা বাদ দিয়ে দিচ্ছি। কারণ বিদেশ ভ্রমণ বাবদ ব্যয় রাখলে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে না।

প্র্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটা নির্মাণ করবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)। ১০টি উপজেলা ও একটি সিটি কর্পোরেশনে এটা নির্মাণ করা হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, নসদর, গোমস্তাপুর, ভোলারহাট ও নাচোল উপজেলায়। এছাড়া নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর ও ধামইরহাট উপজেলা নির্বাচন করা হয়েছে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আম সংগ্রহ, ৩০ শতাংশ অপচয়রোধ ও ভ্যাপর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা। যাতে করে আমের গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ও বিপণন দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ করা যায়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আম প্রসেসিংয়ে জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজের চোখে এসব প্রযুক্তি দেখলে দেশে সঠিকভাবে প্রয়োগ সহজ হবে। এছাড়া প্রকল্পের ডিপিপি যখন প্রস্তুত করা হয় তখন কোভিড-১৯ ছিল না। তাই বিদেশ প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে পিইসি সভায় এ খাতে ব্যয় বাদ দিলে কোন আপত্বি নেই বলে দাবি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (নীতি ও পরিকল্পনা) শাহানাজ বেগম নীনা বলেন, প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আম প্রসেসিংয়ে মূলত জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজের চোখে এসব প্রযুক্তি দেখে এলে দেশে প্রয়োগ সহজ হতো। তাছাড়া যখন ডিপিপি তৈরি হয় তখন করোনা পরিস্থিতি ছিল না। তারপরও বিদেশ প্রশিক্ষণ খাত পরিকল্পনা কমিশনর ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩০টি জেলায় আমের চাষ হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর এসব জেলা আমের জন্য বেশি বিখ্যাত। এসব জেলায় উৎপাদিত উন্নত জাতের আমের মধ্যে ফজলি, লেংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত, অশ্বিনা, কিষাণভোগ, কুয়াপাহাড়ি, লতা বোম্বাই, ফোরিয়া বোম্বাই, কোহিতুর, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, মিশ্রিভোগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে আম উৎপাদন হলেও উপযুক্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রচুর পরিমাণ আম নষ্ট হয়। সংগ্রহ মৌসুমে তাপমাত্রা ও আদ্রতা উভয়ই বেশি থাকে বলে আম বেশি নষ্ট হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে, যা উৎপাদনের তুলনায় অত্যন্ত কম। এর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম, আমের সীমিত প্রাপ্তিকাল, গরমপানি শোধন ব্যবস্থার অভাব, অপর্যাপ্ত সংগ্রহত্তোর ব্যবস্থাপনা।

বিশেষ করে অনুন্নত প্যাকেজিং ও পরিবহন ব্যবস্থা, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদির কারণে আম নষ্ট হচ্ছে। পাকা আম সংরক্ষণে এই প্লান্ট ব্যবহার করলে ফরমালিন কিংবা অন্য কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। গরম পানিতে আম শোধন করলে তাতে যেমন আমের সংরক্ষণ- ক্ষমতা বাড়াবে, তেমন এর ভেতরে থাকা রোগ- বালাই দূর হবে। আবার ফরমালিন ও কাটনাশকের মত এর কোনো ক্ষতিকারক পার্শ্ব- প্রতিক্রিয়া নেই। এই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত আম আন্তর্জাতিক মানসম্মত হবে, যা আমের রপ্তানি বৃদ্ধি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে সহায়তা করবে। এই প্ল্যান্ট স্থাপন করলে জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

প্রকল্পের প্রস্তাবিত মূল কার্যক্রম হচ্ছে ১২ হাজার ৪০০ বর্গফুটের ভেপুর হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বর্গফুটের স্টিলের ট্রাকচারের স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ৮০০ জন কৃষক, ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা, প্রক্রিয়াজাতকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্যাকেজিং সরঞ্জামাদি (ক্র্যাস্টস, র‌্যাপিং ব্যাগ, সটিং, ম্যাটস, ডিজিটাল পরিমাপক যন্ত্র, ত্রিপল ইত্যাদি সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩টি কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ইউপিএসসহ ও অনান্য যন্ত্রাংশ কেনা হবে। তিনটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর স্ক্রিনসহ, একটি ফ্রিজ, ২টি ফটোকপিয়ার, ৩টি আইপিএস, ৩টি এয়ার কন্ডিশনার সংগ্রহ করা হবে।