বাড়ি রাজনীতি আওয়ামী লীগ হাইব্রিড নেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে দলীয় পদের...

হাইব্রিড নেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে দলীয় পদের দায়িত্ব

0
হাইব্রিড নেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে দলীয় পদের দায়িত্ব
হাইব্রিড নেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে দলীয় পদের দায়িত্ব

‘দলীয় পদ বাণিজ্য’-কথাটা শু’নলেই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে প’ড়ে যান অনেক নেতা। বি’ভিন্ন সময় বিভিন্ন দ’লের নেতাদের বি’রুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অ’ভিযোগ উঠেছে, তবে পরে এর তে’মন সত্যতা মেলেনি। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারাও নাকি ‘পদ বাণিজ্য’ করেন- এটিই এখন দলীয় আলোচনার ‘হট কেক’। অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিড নেতাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থের বি’নিময়ে দলীয় পদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যেও নাকি কতিপয় নেতা জেলা, মহানগর, থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি করতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে ‘পদ বাণিজ্য’ আসলে হয় কি না- তা নিয়ে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন দলের সিনিয়র নেতারা।

দলীয় সূত্রমতে, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্যপদ নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্যপদ বিতরণ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় নেতারা নগর নেতাদের হুঁশিয়ার করেছেন। তারা বলেন, পদ বাণিজ্য এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। দক্ষিণের কেন্দ্র, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠনে যেন এসব অভিযোগ না ওঠে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতেও বলা হয়।

অনুষ্ঠানে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্র তুলে ধরে মির্জা আজম বলেন, ‘এই মুহূর্তে পদ বাণিজ্য সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। এখানে কোনো বিনিয়োগ লাগে না। দল একটানা ১২ বছর ক্ষমতায় আছে। দেখা যাবে, অনেকে ব্যবসা করতে গিয়ে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। ঋণখেলাপি হয়েছেন। আবার কেউ কেউ শেখ হাসিনার দেয়া দায়িত্ব (পদ-পদবি) পেয়ে কমিটি গঠন করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।’

মির্জা আজমের এই বক্তব্যের ভিডিও পরে দলের ত্যাগী নেতারা নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার করেন। তারা মির্জা আজমের বক্তব্যকে সমর্থন জানান। এরপর দলের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। তবে দলের একাধিক নেতা পদ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে তৃণমূলে একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় পদ বাণিজ্যের সত্যতা পাওয়া গছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বিভাগের এক জেলার সিনিয়র নেতা বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কখনো পদের জন্য রাজনীতি করিনি। তবে বর্তমানে অনেকেই জেলা পর্যায়ে উপদেষ্টা হয়েছেন। আসলে তারা যে কবে রাজনীতি করেছেন- এটাও দেখার বিষয়। আমরা তো বলতে পারছি না। অনেকের কাছ থেকে জেনেছি- মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নাকি তারা উপদেষ্টা হয়েছেন। জেলা কিংবা উপজেলার নবাগত কমিটিগুলো বিশ্লেষণ করলেই নেত্রী এর সঠিক চিত্র পেয়ে যাবেন।’

সিলেটের বিভিন্ন থানা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার ত্যাগী নেতারা কেন্দ্রেও অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগে পদ বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নেই। কোথাও এমনটা হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিই।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমরা তা মনিটরিং করি। পদ বাণিজ্যের বিষয়টি আমরা অতীতেও শুনেছি, তবে এগুলো আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতে হয়েছে। আর কিছু সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে শুনেছি, তবে সেটা আলাদা ব্যাপার। সেটা অতীতে হয়েছে। নিকট অতীতে এ ধরনের ঘটনা আছে বলে আমার জানা নেই।’

কেন্দ্রের নেতারাও যে বলছেন পদ বাণিজ্যের কথা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা দলের উপকার চায়, না কি ক্ষতি চায়- এটাই চিন্তা-ভাবনার বিষয়। তারা পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে চায়। আওয়ামী লীগে আসলে কি ‘পদ বাণিজ্য’ হয়? এর কোনো নজির আছে? আমি দৃঢ়ভাবে বলব, এই ধরনের সুযোগ আওয়ামী লীগে নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে দলের সভাপতি সেখানে এই ‘পদ বাণিজ্য’ আওয়ামী লীগের মতো ঐতিবাহী রাজনৈতিক দলের ইতিহাসে নেই। দলের সৃষ্টি হতে আজ অব্দি তা হয়নি। কিঞ্চিৎ পরিমাণ কোথাও হয়ে থাকলেও তা বিছিন্ন ঘটনা, যদি অভিযোগ আসে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হয়।’

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা পদ বাণিজ্যের কথা বলেন তারা সস্তা রাজনীতির জন্য, মাঠ দখলে নেয়ার জন্য এটা করেন। দলকে বিতর্কিত করে, দলের নেতাকর্মীদের মানুষের কাছে, মিডিয়ার কাছে বিনা কারণে বিতর্কিত করা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয়? আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে আমাদের তা বুঝতে হবে।

আসলে এমন কিছু যদি হয়ে থাকে, যদি প্রমাণ থাকে, তা দলের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন। দলের সভানেত্রীর কাছে দিতে পারেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে দিতে পারেন, সেখানে ব্যবস্থা নেয়া না হলে তখন দলের ভেতরে আলোচনা করা যেতে পারে। নাকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বা মাইক নিয়ে বলব, তখন মিডিয়ায় বড় করে তা আসবে। আমরা এ দুটির কোনটি চাই? আওয়ামী লীগের মন্দ চাই না ভালো চাই? বিশুদ্ধতা চাই না কি দলকে বির্তকিত করতে চাই?’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলা ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘পদ বাণিজ্য হয় না’- এটা বলব না। আবার ‘পদ বাণিজ্য হচ্ছে’- এটাও বলা যায় না। আমাদের নেত্রী তৃণমূল পর্যায়ে একটি সুন্দর, ত্যাগী, গ্রহণযোগ্য ও দুঃসময়ের নেতাদের নিয়ে কমিটি ঢেলে সাজানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব হচ্ছে তৃণমূলকে সেভাবে সাজানো। এক্ষেত্রে যদি কেউ পদ বাণিজ্য করে আমি মনে করি সে কোনো মানুষের পর্যায়ে পড়ে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘পদ বাণিজ্যের কোনো অভিযোগ এলে, এর সত্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলে যে ওই পদ দেবে তার পদও যাবে। যাকে পদ দেয়া হয়েছে ওই পদ সে পাবে কি না- সেই সিদ্ধান্ত দল নেবে। তবে পদ বাণিজ্য হয় কি না- তা আমার জানা নেই। যদি কেউ পদ বাণিজ্য করে সে নিজের বিবেক ও রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’