যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। এটি মূলতঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের জনগণের প্রতি এর আগের বছর কি ধরণের আচরণ করেছে সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক পর্যালোচনা।
এতে বলা হয়েছে ২০২০ সালে গোটা বিশ্বেই মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্লিংকেন সাংবাদিকদের বলেন, মানবাধিকারের ধরণটা ভুল দিকে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারি গোটা পৃথিবীতে অনন্য এক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং কোন কোন দেশের সরকার এই সংকটকে নিজ নাগরিকদের অধিকার লংঘন করার এবং কর্তৃত্ববাদি শাসন আরও শক্ত করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছে।
মূল অংশবিশেষ তুলে ধরে বাংলাদেশ নিয়ে করা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করেছে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। ওই অংশটুকুতে বলা হয়েছে-
বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যেখানে বেশিরভাগ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের জন্য জয়ী হন যা তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল রাখে। পর্যবেক্ষকদের বিবেচনায় ওই নির্বাচনটি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এবং ব্যালট-বক্স স্টাফিং এবং বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানো সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা এবং কাজের পরিধি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে এতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের পর ব্যাপক দায়মুক্তির খবর পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা তদন্ত ও বিচারের জন্য সরকার অল্প কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
এতে উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছেঃ সরকার বা এর এজেন্টদের দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনী বা স্বেচ্ছাচারি হত্যাকাণ্ড; সরকার বা এর এজেন্টদের দ্বারা গুম; সরকার বা এর এজেন্টদের দ্বারা নির্যাতন ও নিষ্ঠুর, অমানবিক, বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তি; কারাগারের অবস্থা শোচনীয় এবং প্রাণঘাতী; স্বেচ্ছাচারি বা বেআইনী আটক; ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় স্বেচ্ছাচারি বা বেআইনী হস্তক্ষেপ; সাংবাদিকদের ও মানবাধিকারকর্মীদের উপর সহিংসতা, সহিংসতার হুমকি এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার, সেন্সরশিপ, সাইট ব্লক করা; শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকারে যথেষ্ট হস্তক্ষেপ, যেমন অত্যধিক নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং এই জাতীয় সংগঠনের কার্যক্রমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ; চলাফেরার স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ; রাজনৈতিক অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ; দুর্নীতি; নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক সহিংসতা এবং তদন্ত ও জবাবদিহিতার অভাব; নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী লক্ষ্য করে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকির সাথে জড়িত অপরাধ; লেসবিয়ান, গেয়ে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার এবং ইন্টারসেক্স ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সাথে জড়িত অপরাধ; সম্মতিযুক্ত সমকামী যৌন আচরণকে অপরাধ গণ্য করার আইন; স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকারের উপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাধা এবং শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপ।