তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সির ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১,১৮৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। যদিও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন যে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে মোট ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকারের দেয়া এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৩৩৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। তাই পরিসংখ্যান গড়মিলটা এখানে স্পষ্ট। যদিও অপহৃতদের এই হিসেবে ধরা হয়নি বা যাদের খোঁজ কখনও পাওয়া যায়নি।
দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকবার সীমান্ত হত্যা বন্ধ আলোচনা, চুক্তি হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায়ও কোনও সমাধান আসেনি। ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার করবে না দুই দেশ, এমন চুক্তি হলেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা৷ এরপর সীমান্তে হত্যা বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও হয় দুই দেশের মধ্যে। সেখানে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করতে একমত হয় দুই দেশ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি সীমান্তে।
বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
শনিবার (২০ মার্চ) ভোরে মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্তে ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বটুলী এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে এক বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। তার নাম বাপ্পা মিয়া (৪০)। তিনি ওই এলাকার আবদুর রউফের ছেলে। ফুলতলা ইউপির সদস্য মইনুদ্দিন জানান, শনিবার ভোর ৪টার দিকে উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পূর্ব বটুলী এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বাপ্পার মরদেহ পাওয়া যায়।
“বাপ্পা মিয়া গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। সীমান্তের ওপারে বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে তার মরদেহ ফেলে রাখা হয়।” বিজিবির-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সিদ্দিকী বলেন, ‘এ বিষয়ে জানতে বিএসএফকে চিঠি দিয়েছি।’
২০২০ সালে সীমান্ত হত্যা
সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বারবার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কমেনি সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে ৫১তম সীমান্ত সম্মেলনেও সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা-নির্যাতনের বিষয়ে বিজিবি’র পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং বিএসএফের পক্ষ থেকে তা শূন্যে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে সীমান্তে মোট ৪৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ৷ এর মধ্যে ৪২ জনকে গুলি করে এবং ছয় জনকে হত্যা করা হয় নির্যাতন চালিয়ে৷ অপহরণ করা হয় ২২ বাংলাদেশিকে৷ ওই সময়ে ২৬ জন বিএসএফ-এর গুলি ও নির্যাতনে গুরুতর আহত হন৷ অপহৃতদের মধ্যে মাত্র পাঁচ জনকে ফেরত দেয়া হয়েছে৷ বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে জানা যায়নি৷
২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা
২০১৯ সালে সীমান্তে বিএসএফ ৩৮ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে৷ তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে গুলি করে এবং পাঁচ জনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়৷ যদিও মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন।যদিও সরকারি হিসাবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বিএসএফ-এর হিসেবে এই সংখ্যা আরও কম।
২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ২০১৮ সালে সীমান্তে নিহতের সংখ্যা ১৪ জন। যদিও সরকারি হিসেবে ২০১৮ সালে সীমান্তে মাত্র তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।
সীমান্তে শিশু নির্যাতন
নির্যাতনের ঘটনাগুলোর মধ্যে শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনাও আছে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭নং আন্তর্জাতিক ৩নং সাব-পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে। এতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার লাশ কাঁটাতারে ঝুলতে থাকে; যা বিশ্ববিবেককে নাড়া দেয়। ফেলানীর বয়স ছিল মাত্র ১৫।
২০১৯ সালের ১০ মে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তে বিএসএফের হাতে নির্যাতনের শিকার হন কবিরুল ইসলাম। তার মুখ এবং পায়ুপথে পেট্রল দেয়া হয়েছিলে। এর ১৭ দিন পর ২৭ মে নওগাঁর শাপার সীমান্তে আজিমুদ্দিন নামের এক রাখালের ১০টি আঙুলের নখ দুষ্কৃতিকারীরা তুলে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এছাড়া, ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। নিহত সোহেল রানা বাবু (১৪) হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের মারাধার গ্রামের একরামুল হকের ছেলে। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল বলেন, দাওয়াত খাওয়ার জন্য কিছুদিন আগে মামার সঙ্গে সোহেল রানা বাবু অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। সোমবার বিকালে তারা জগদল সীমান্তের ৩৭৩/২ এস পিলার এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে আসছিল। এ সময় ভারতের উত্তর দিনাজপুর জেলার কুকড়াদহ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের দিকে গুলি ছোঁড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই বাবু নিহত হয়। তার মামা পালিয়ে চলে এসেছে বলে জানান শফিকুল। তবে সোহেলের লাশ ভারতে রয়ে যায়।
পরিসংখ্যানে গড়মিল
বছরভিত্তিক সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে মারা যান ৬৬ জন বাংলাদেশি, ২০১০ সালে ৫৫ জন, ২০১১ ও ২০১২ সালে ২৪ জন করে, ২০১৩ সালে ১৮ জন, ২০১৪ সালে ২৪ জন, ২০১৫ সালে ৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২৫ জন, ২০১৭ সালে ১৭ জন এবং ২০১৮ সালে ৩ জন মারা যান সীমান্তে। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে সীমান্তে হত্যার সংখ্যা অনেক বেশি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ২৬, ২০১৪ সালে ৩৩, ২০১৫ সালে ৪৬, ২০১৬ সালে ৩১, ২০১৭ সালে ২৪, ২০১৮ সালে ১৪ এবং ২০১৯ সালে ৪৩ টি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তবে সীমান্ত অঞ্চলে যারা আহত বা অপহরণের শিকার হয়েছিল তাদেরকে এই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১,১৮৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ।
প্রতি ১২ দিনে এক বাংলাদেশির মৃত্যু
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।
গড়ে প্রতি ১২ দিনে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, সীমান্তে কেউ অপরাধ করলেও হত্যা কোনওভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, এটা (সীমান্ত হত্যা) অবশ্যই শূন্যের কোঠায় নেমে আসা উচিত। আমরা দেখতে চাই বর্ডার কিলিং একটাও নাই, এমন একটা পরিবেশ এবং সেই রকম একটা সুসম্পর্ক আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে তৈরি হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মতে বিএসএফ আত্মরক্ষার জন্য হত্যা করে। কিন্তু, বাস্তবতা তা বলে না। বেশ কয়েক বছর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) ‘ট্রিগার হ্যাপি’ নামে একটি প্রতিবেদনে এ ধরনের বেশ কয়েকটি মামলার উল্লেখ করেছে। যাতে বেঁচে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন যে বিএসএফ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা না করে বা সতর্ক না করেই নির্বিচারে গুলি চালায়। বিএসএফ আরও দাবি করেছে যে দুর্বৃত্তরা গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করলে তাদের সদস্যরা গুলি চালায়। তবে কোনও অপরাধের সন্দেহে প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার ন্যায়সঙ্গত হয় না।
এইচআরডাব্লিউ, অধিকার ও এএসকের প্রতিবেদন এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে অপরাধী হিসেবে সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যক্তিরা হয় নিরস্ত্র থাকে অথবা তাদের কাছে বড়জোর কাস্তে, লাঠি বা ছুরি থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীদের পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পিঠে গুলি করা হয়েছিল।
এইচআরডাব্লিউ আরও উল্লেখ করেছে, তদন্ত করা মামলার কোনোটিতেই বিএসএফ প্রমাণ করতে পারেনি যে হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র বা বিস্ফোরক পাওয়া গেছে; যার দ্বারা তাদের প্রাণ সংশয় বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
সুতরাং, বিএসএফের মেরে ফেলার জন্য গুলি চালানোর দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে মানুষের জীবনের অধিকার লঙ্ঘন করে। যা ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে যা বলছে বিএসএফ
পাচারকারীরা প্রহরীদের ওপরে আক্রমণ করলে তবেই “প্রাণ বাঁচাতে” তারা গুলি চালিয়ে থাকে, এমনটাই সীমান্তে গুলি চালানোর ঘটনা প্রসঙ্গে বিএসএফ কর্মকর্তারা বলে আসছেন। তাদের দাবি, যখন থেকে নন-লিথাল ওয়েপন, অর্থাৎ প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেছে বিএসএফ, তখন থেকেই বিএসএফ সদস্যদের ওপর পাচারকারীদের হামলার সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত দা, কাটারির মতো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে যেমন প্রহরারত বিএসএফ সদস্যদের ওপরে আক্রমণ করা হয়, তেমন আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হয় কখনও কখনও।
বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান এবং গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের যে অঞ্চলে বেশি হয়ে থাকে, সেই দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এস এস গুলেরিয়া এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “সীমান্তে গুলি কেন চলে, সেই প্রশ্নের জবাব আমরা আগেও নানা স্তরে দিয়েছি।”
“আমরা এবার পাল্টা প্রশ্ন করতে চাই, যে রাতের অন্ধকারে কারা আন্তর্জাতিক সীমান্তে আসে? কেনই বা আসে? বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এদের যে গরু-ব্যবসায়ী বলা হয়, আসলেই কি এরা ব্যবসায়ী না পাচারকারী?”
সীমান্তরক্ষীদের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে বিজিবি-র প্রায় নাকের ডগায় পাচার হয়ে যাওয়া গরু কেনাবেচার হাট বসে। সেগুলো চলতে দিয়ে কী পাচারকারীদেরই উৎসাহ দেয়া হচ্ছে না?
গুলেরিয়া জানান, বিজিবির সঙ্গে আমরা নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করে থাকি ফেন্সিডিল বা সোনা পাচার হওয়ার সময়ে আটক করা হয়। এছাড়া পাচার হওয়ার সময়ে কত গরু আমরা আটক করি, সেই তথ্যও তাদের দিয়ে থাকি। কিন্তু বিজিবি কত গরু আটক করল, সেই তথ্য কিন্তু আমাদের দেয়া হয় না।
দিন দিন বেপরোয়া হচ্ছে বিএসএফ
পশ্চিমবঙ্গ-ভিত্তিক ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) প্রধান কীরিটি রায় বলেন, ‘‘আগে বিএসএফ বলত আমাদের ওপর আক্রমন করতে এলে আমরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছি। লাশ ফেরত দিত। এখন আর তাও বলে না। গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। ফেরতও দেয় না।”
তিনি বলেন, ‘‘ভারত একটা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা তো সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবে না। সীমান্তে মুসলমানদের মারছে। আর ঠেলে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার প্রতিবাদ করছি। কিন্তু ভারত হত্যা করবেই। সে থামবে না। তারা মারছে তো মারছেই। কিন্তু বাংলাদেশের দিক দিয়ে শক্ত কোনো প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছিনা। মেরে দিচ্ছে কোনো বিচার নাই।”
সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘‘সীমান্ত হত্যা আবার বেড়ে যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক এবং সামাজিক কারণ আছে। আর দুই দেশেই এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেটা গড়ে ওঠেনি। ভারত বলছে। আমরাও বলছি। তবে ফেলানি হত্যার পর সীমান্ত হত্যা কমেছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় সীমান্তে গরু ব্যবসীরা যে পরিমাণ হত্যার শিকার হন, মাদক ব্যবসায়ীরা কিন্তু তত নন। কিন্তু মাদক চোরাচালন বেশি হয়।”
বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সমালোচনা হয় সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারছে সেটি নিয়েও। বাংলাদেশের যেকোনো মানুষের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। এখানে আমাদের কণ্ঠটা একটু সোচ্চার হলে হয়তো ভারতও একটু সক্রিয় হতো। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এন এম মুনীরুজ্জামানবলেছেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ রাজনৈতিক ইচ্ছার ঘাটতি।
এটা বন্ধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নাই। কারণ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে, সেখান থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে এটা আর হবে না। কিন্তু একজন প্রাক্তন সৈনিক হিসাবে আমি বলতে পারি, যদি সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পরিষ্কার আদেশ থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা না মানার অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, বাইরে আমরা যেটাই শুনতে পাই, সীমান্তরক্ষীদের কাছে সেই ধরনের কড়া আদেশ নিশ্চয়ই পৌঁছায়নি। তারা যদি নির্দেশ দিয়ে থাকতো, সেটা যদি অমান্য হত, তাহলে সেটার জন্য তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় নিশ্চয়ই জবাবদিহি করতে হতো। সেরকম কিছুও আমরা শুনি না বা প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই না।