৮৬ লাখ টাকা আত্মসাত করে এবার ধরা ঢাবি অধ্যাপক জিয়া রহমান
বিভাগের ৮৬ লাখ টাকা আত্মসাত করে এবার ধরা খেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান। গত বছর সালামের শুদ্ধ উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। ডিবিসি নিউজের একটি টকশোতে বলেছিলেন-আমরা ছোট থেকে স্লামালাইকুম বলে আসছি। আমাদের মুরব্বীরাও এভাবে সালাম দিয়েছেন। আর এখন একদল লোক শুদ্ধ করে সালাম দেয়। তারা বলে-আসসালামু আলাইকুম। এরা জামায়াত-শিবিরের লোক। এভাবে সালাম দিয়ে তারা মানুষকে জঙ্গীবাদের দিকে আকৃষ্ট করে।
অধ্যাপক জিয়ার সেই বক্তব্য নিয়ে তখন সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। মুসলমান নামধারী জিয়া যে একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষী। তার সেই বক্তব্য থেকেই মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। আর সব কিছুর জন্যই তারা দায়ী করে জামায়াত শিবিরকে। জামায়াত শিবির ভাল কাজ করলেও এসব ধর্মবিদ্বেষীরা বলে-এগুলো দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করে খারাপ পথে নিচ্ছে। অথচ সেই জিয়া নিজেই এখন চোর উপাধি পেলেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়ার পরও সেই বিশ্¦বিদ্যালয় থেকেই চুরি করে নিয়েছে লাখ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ৮৬ লাখ টাকার বেশি খরচের বিল–ভাউচার নেই। বড় খরচের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমোদন নেই। বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়া একক সিদ্ধান্তে খরচ করেছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৭ লাখ টাকা সম্মানীও নিয়েছেন তিনি। কেনাকাটায় ভ্যাট, করও দেননি।
বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট শাখা এই নিরীক্ষা করে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ৫ বছর ১ মাস সময়ের লেনদেন খতিয়ে দেখা হয়। ১ মার্চ প্রতিবেদন জমা হয়।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা থেকে গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক জিয়া রহমান।জানা গেছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে বিভাগের দুজন শিক্ষকের নামে ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলা হয়েছে। কোনো ক্রয়েরই ভ্যাট ও কর দেওয়া হয়নি। ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ভ্যাট বাবদ প্রায় ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৭৩ টাকা এবং কর বাবদ ২ লাখ ৫৫৯ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সান্ধ্য কোর্সের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মানী বা পারিশ্রমিক দেওয়ার কোনো নীতিমালা শুরুতে গ্রহণ করেনি এই বিভাগ। পরে নীতিমালা করা হলেও একাডেমিক কমিটিতে তা অনুমোদন করা হয়নি। এ খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আবার যখন নীতিমালা হয়েছে তখন চেয়ারম্যানের সম্মানী ভাতার ক্ষেত্রে সে নীতিমালা মানা হয়নি। অন্য বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা সাধারণত তিন হাজার টাকা করে সম্মানী পান। কিন্তু জিয়া রহমান মোট ১৭ লাখ টাকা সম্মানী নিয়েছেন।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বিভাগের বিভিন্ন খাত ও প্রকল্পে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা প্রকল্পের নামে ১ লাখ টাকা, ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের নামে ৮ লাখ টাকা, বিভাগীয় শ্রেণি সংস্কারের নামে ৪২ লাখ টাকা, কম্পিউটার ল্যাব সংস্কারের নামে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নামে সাড়ে ৫ লাখ টাকা, কনফারেন্সের অনুদান ৯ লাখ টাকা, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজনে ১০ লাখ টাকা, ভারত ও ভিয়েতনাম ভ্রমণে ১১ লাখ টাকা, কম্পিউটার ও অন্য মালামাল ক্রয়ে ১২ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু এসব খরচের হয় ভাউচার নেই, না হয় যথাযথ অনুমোদন ছিল না, অথবা কোনো কমিটির মাধ্যমে টাকা ব্যয় হয়নি। যে ভাউচারগুলো পাওয়া গেছে, তার ৯৫ শতাংশ স্বাক্ষরহীন, টাকা গ্রহণের রসিদ নেই। ছয়টি চেকে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, খরচের ভাউচার নেই। এমনকি কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, তা–ও জানা যায়নি।