আওয়ামী লীগপ্রথম আলো

নেতা বানানোর কথা বলে বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা করে কতজনের কাছ থেকে নিয়েছেন?

ঘটনাটি রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হওয়া সংগঠনের জরুরি সভার

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের কাছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর (প্রদীপ) এলাকা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের কমিটি সম্পর্কে তাঁকে কেন জানানো হয়নি। লেখক ভট্টাচার্য জবাবে প্রদীপকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘নেতা বানানোর কথা বলে বিকাশে পাঁচ হাজার টাকা করে কতজনের কাছ থেকে নিয়েছেন?’

ঘটনাটি রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হওয়া সংগঠনের জরুরি সভার। এটিসহ নানান বিতর্কে উত্তপ্ত ছিল ওই সভা। এ জরুরি সভার আলোচ্য বিষয় ছিল: ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদ পূরণ, জেলাভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন এবং সাম্প্রতিক একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা (এক কনিষ্ঠ নেত্রীকে দুই জ্যেষ্ঠ নেত্রীর মারধর)।

প্রদীপ চৌধুরীর বিরুদ্ধে লেখক ভট্টাচার্য ‘নেতা বানানোর কথা বলে টাকা নেওয়ার’ অভিযোগ তোলার পর প্রদীপ বলেন, তিনি এর প্রমাণ চান। প্রমাণ করতে পারলে ছাত্রলীগ থেকে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। তখন লেখক ভট্টাচার্য বলেন, প্রদীপের বিকাশে টাকা লেনদেনের স্ক্রিনশট তাঁদের কাছে আছে। এর জবাবে প্রদীপ বলেন, ‘স্ক্রিনশট তো নীলক্ষেত থেকে বানানো যায়। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে কি নেতা বানানো যায়? আমার সম্পর্কে সবাই জানে, এই অভিযোগ কেউ বিশ্বাস করবে না।’ এরপর প্রদীপ বসে যান।

জানতে চাইলে প্রদীপ চৌধুরী এই কথোপকথনের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে চরিত্র হননের চেষ্টা অপ্রত্যাশিত।’ আর লেখক ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি তেমন কিছু নয়। কথা প্রসঙ্গে এটি বলেছিলাম।’

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী ফাল্গুনী দাসকে কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজীর হোসেন (নিশি) ও শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জরুরি সভায় এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন সহসভাপতি সোহান খান৷ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামস ঈ নোমান তখন টেবিল চাপড়ে সোহানের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘আমার প্রশ্ন, আপনাকে গালি দিলে আপনি এখন কী করবেন?’ এ নিয়ে সভায় তুমুল হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক মেশকাত হোসেন নোমানকে ‘তুই’ সম্বোধন করে বসে পড়তে বললে নোমান মেশকাতের এই ‘অসদাচরণের’ ঘটনার শাস্তি চান৷ পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সহসভাপতি সোহান খান বলেন, ‘ফাল্গুনী দাসকে মারধরের ঘটনা সম্পর্কে সভাপতি বলেছেন, ফাল্গুনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ট্রমা কাটিয়ে উঠলে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি ঘরোয়া সমাধান করা হবে। তবে এ বিষয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে আমরা সন্তুষ্ট নই। আর শামস ঈ নোমানের সঙ্গে ফাল্গুনীকে মারধর করা নেত্রীদের কী সম্পর্ক, তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। জরুরি সভায় এ ছাড়াও আমি সম্মেলন ছাড়া ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি করার বিরোধিতা করেছি। এ বিষয়েও সন্তোষজনক কোনো জবাব পাইনি।’

কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সোহানুর রহমান সভায় প্রশ্ন তোলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মাদক-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? তাঁর সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, ‘আমি বিষয়টি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি, সভাপতিকে দালিলিক প্রমাণও দিয়েছি। তবু এ বিষয়ে কালক্ষেপণের কারণ কী?’ এতে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য পাল্টা আরেকটি প্রশ্ন করলে এ নিয়ে সভায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ‘কিছু ঘটনায় আমরা (ছাত্রলীগ) ব্যবস্থা নেওয়ার পর দেখা গেছে যে ঘটনা সত্য নয়। তবু আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখব।’

সহসভাপতি সোহানুর রহমান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মারধরের শিকার নেত্রী ফাল্গুনী দাসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান। তখন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরাও এর উপযুক্ত বিচার চাই। এ বিষয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ভুক্তভোগী ফাল্গুনী সুস্থ হলে তাঁর সঙ্গে কথা বলব। তাঁর চাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

রোববার বিকেল চারটা থেকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ জরুরি সভা চলে। ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান এতে সভাপতিত্ব করেন৷ প্রথম দেড় থেকে দুই ঘণ্টা আগামী ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। এরপর অন্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা৷

Back to top button