তমা ও তার পরিবার মিলে আমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করেছে

গত বছর মে মাসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী হিশাম চিশতির সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তমা মির্জা। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় এসে আলাদা থাকছেন তারা। শনিবার তমা মির্জা জানান হিশামকে ডিভোর্স দিচ্ছেন তিনি। তার আগে একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও করেন। মামলায় হিশাম চিশতি উল্লেখ করেন, পাওনা টাকা চাওয়ায় তাকে হত্যার চেষ্টা করেন তমা ও তার পরিবার। অন্যদিকে যৌতুক, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করেছেন তমা মির্জা।

গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডা থানায় তমার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে, তমা মির্জা, তার বাবা-মা, ভাই এবং অজ্ঞাত একজনকে।

এরপর হিশাম চিশতিকে মারধরের কিছু ছবি গণমাধ্যমে আসে। বিষয়টি নিয়ে হিশাম চিশতি বলেন, ‘আগেই বিচ্ছেদ চেয়েছিলাম এবং তার জের ধরেই হামলার শিকার হতে হয়েছে আমাকে।’ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ ও মারধরের চিহ্নগুলো তমা মির্জার নির্যাতনের চিত্র বলে দাবি করেন হিশাম। তিনি বলেন, ‘তমা ও তার পরিবার মিলে আমাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করেছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে তমা মির্জার ফোনে ফোন কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে এর আগে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বিষয়টি এখন সে অন্যভাবে উপস্থাপন করছে, আমার নামে সে মামলা করেছে পরে। আমি তার নামে আগে মামলা করেছি বাড্ডা থানায়। নারী নির্যাতন, যৌতুক ও সাইবার ক্রাইমে মামলা করেছি চলতি মাসের ৬ তারিখ। সে বাচাঁর জন্য মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এর আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। সে বিভিন্ন সময় নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। বিভিন্ন লোকজন নিয়ে এসে হট্টগোল করে, এমনকি গায়েও হাত দেয়। তাই নারী-নিয়াতন, যৌতুক, সাইবার ক্রাইম মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে যদি নিরাপরাধ হতো তাহলে আমার মামলা করার পরদিন মামলা করত না।’

অন্যদিকে তমা মির্জাও স্বামী হিশাম চিশতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। যৌতুক দাবি, নির্যাতন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে স্বামী হিশাম চিশতির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নায়িকা। দুটি মামলাই হয়েছে রাজধানীর বাড্ডা থানায়।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী হিশাম সেখানকার রাজনীতিতে যুক্ত। বিবাদের কারণ হিসেবে হিশাম জানান, ২০১৮ সালে তমার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে তারা বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, তমার আগেও দুবার বিয়ে হয়েছিল, যা তারা গোপন করেছেন। এ ছাড়া তমার পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতাও করে আসছিলেন হিশাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিশাম করোনার সময় অসুস্থ মাকে দেখতে কানাডা থেকে দেশে আসেন। এরই মধ্যে স্ত্রী তমাকে নিয়ে দুবাইয়ে হানিমুনেও যান। হানিমুন থেকে ফেরার পর নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র বিবাদ শুরু হয়।

হিশাম জানান, তমার আগের দুই বিয়ের খবর জেনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তবু সংসার টিকিয়ে রাখতে সব কিছু মেনে নিয়েছিলেন। হিশাম চিশতি বলেন, ‘তমাদের একটি স্বর্ণের দোকানের শেয়ার ছিল। আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ধার নিয়ে তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। সেখান থেকে আয় করে তারা সংসার চালাবেন বলে জানিয়েছিলেন। ’

হিশাম জানান, শুরুতে আপত্তি করলেও তমার চাপে তার পরিবারকে টাকা দিতে তিনি বাধ্য হন। সেই টাকা দেওয়ার পরও তাদের চাহিদা কমেনি। প্রতি মাসে সংসার খরচ বাবদ তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিতে থাকেন। এর বাইরে তমার ভাইয়ের খরচ, বাবা-মায়ের চিকিৎসা, বাসার পোষা কুকুরের খাবার খরচসহ নানা খাতে, নানা অজুহাতে তারা টাকা চাইতেই থাকেন। বাংলাদেশে আসার পর বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা নেন তমা। স্ত্রী হিসেবে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতে রাজি হচ্ছিলেন না।

হিশাম জানান, এসব নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে শুরু হয় তীব্র টানাপড়েন। একপর্যায়ে তাদের টাকার চাহিদাও বাড়তে থাকে। এ সময় তিনি ধরে নেন, তার ধার দেওয়া ২০ লাখ টাকা ব্যবসায় খাটানো হয়নি; বরং বিলাসিতায় ওড়ানো হয়েছে। তিনি তমার কাছে সেই টাকার হিসাব চান এবং তমার পরিবারকে জানান, আর নয়। তমাকে তিনি কানাডা নিয়ে যাবেন এবং সংসার খরচের জন্য মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বাইরে কিছুই দেবেন না। এতেই তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে শ্বশুরবাড়ির সবাই মিলে তাকে মারধর করেন।

এদিকে তমা মির্জা এসব দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমার আয়ের টাকা কেন আমি আমার পরিবারকে দিই, এটা নিয়ে নানা কথা শুনতে হতো আমাকে। শুধু কি তা-ই, আমাকে কাজ করতেও বাধা দেয় সে। আমার কাছ থেকে টাকা নিতে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে। তার কাছ থেকে আমার পরিবার টাকা ধার নেবে কেন! কানাডা থেকে দেশে এলে সে তো আমার টাকায় চলে। আমি টাকা না দিতে চাইলে টর্চার করে। তার টর্চারের কারণেই একটা সময় শ্বশুরবাড়ি থেকে আমি বাবার বাসায় চলে আসি। ’

উল্লেখ্য, এমবি মানিকের ‘বলো না তুমি আমার’ ছবির মধ্য দিয়ে রুপালি পর্দায় ক্যারিয়ার শুরু করা তমা মির্জা ২০১৫ সালে শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নদীজন’ ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

Exit mobile version