রাজধানীর পল্লবীতে দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ৩ জনকে কুপিয়ে জখম করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ সভাপতি জয়সহ তার বাহিনী। বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পল্লবীর এভিনিউ-৫ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতরা জানান, পল্লবীর বাসিন্দা সাদ্দাম একজন শাড়ি ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের নেতা নামধারী কামরুল হাসান জয় তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেওয়ায় শাড়ি ব্যবসায়ী সাদ্দামের ছোট ভাই ফয়াজকে এভিনিউ ৫ হাজি হোটেলের সামনে একা পেয়ে মারধর শুরু করে। এসময় তার বন্ধুরা ফইয়াজকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে কথিত ছাত্রলীগ নেতা জয় (৩৩), সোহাগ(২৬) ,মোঃ তিসান (১৯), মোঃ রাসেল (২৫), শাকিল (২২), মোঃ আমান (২৩),আকাশ (২০), মোঃ সৈকত (২০), মাহবুব (২৬), মোঃ ইমন (২১), রাকিবুল ইসলাম বেপারী (২৫) সহ ৭/৮ জন মিলে ফইয়াজ, ইমরানসহ ৬ জনকে এলোপাতাড়ি ভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাপাত ঘটায় হত্যার উদ্দেশ্যে।
পরে রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে তাদের উদ্ধার করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। আহত ৩ জনের মধ্যে ফইয়াজ ও ইমরানের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পল্লবী থানায় জয় সহ মোট ১০ জনকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর বড় সাদ্দাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনীতির পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতা জয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। তার বাবাও এ হাসপাতালের কর্মচারী। পিতার বদৌলতে তিনি হাসপাতালে কর্মচারী পদটি বাগিয়ে নেন। পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি না হয়েও তিনি নিজেকে সভাপতির পরিচয় দেন। এজন্য ভিজিটিং কার্ডও করেছেন। অবশ্য আসন্ন সন্মেলনে তিনি পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী। অভিযোগ রয়েছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় কোপাকোপি ও মারামারি মতো ঘটনা ঘটান তিনি। তার নিয়ন্ত্রনে রয়েছে মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার কয়েকটি ক্যাম্পের কিশোর গ্যাং। গ্যাং সদস্যদের দিয়ে তিনি এলাকায় মাদক, ছিনতাই, ফুটপাত, বাসা বাড়ির ময়লা ও ব্যাটারিচালিত রিক্সায় নিয়মিত চাঁদাবাজি করেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, কামরুল হাসান জয় বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি। গতকাল রাতে মিরপুর ১১ নম্বরে একটি মারামারি ও হামলার ঘটনা শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
অভিযোগের তদন্তকারী ও পল্লবী থানার এস আই আসাদুজ্জামান বলেন, গতাকল রাতে যাদেরকে কোপানো হয়েছে তারা এম্বুলেন্স নিয়ে থানায় এসেছিল। কোপানোর ঘটনা সত্যি। তবে ৫ লাখ টাকা চাঁদার জন্য এ হামলা হয়েছে কিনা তা এখন বলতে পারছি না। অভিযোগের তদন্ত চলছে। তবে এ ঘটনায় মামলা হবে।
পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, গতকাল রাতে এভিনিউ ফাইভের মারামারির ঘটনায় কেউ আমার কাছে আসেনি। আমি এখন একটি অনুষ্ঠানে এসেছি। যারা ঘটনার শিকার তারা যদি আসে মামলা নেব।
অন্যদিকে ভুক্তভোগি পরিবার পল্লবী থানায় ঘটনার রাতেই ছাত্রলীগ নেতা জয়সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে, তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, জয় এক নম্বরে একটা বেয়াদব, এলাকার ময়মুরুব্বিদের সন্মান করেনা, সে সব সময় ঘাড় ফুলিয়ে চলে। রাত বেরাত এলাকায় বেপরোয়া ভাবে ঘুরাফেরা করে। সে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের মদদে চলে। শুনেছি সে নাকি এবার ছাত্রলীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নেওয়ার ধান্দায় রয়েছে। সে যদি সত্যি সত্যি ছাত্রলীগের সভাপতি হয় তাহলে এই এলাকায় সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেনা। যুবতী মেয়েরাও নিরাপদ থাকবেনা।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে কাউন্সিলর মানিকের কাছে জানতে তার ব্যবহারিক টেলিটক মোবাইল নাম্বারে (বিকাল চার’টা ১২ মিনিটের সময়) একাধিক বার চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।