টাকার জোরে বাংলাদেশে নিজে এমপি এবং স্ত্রীকে এমপি করতে পারলেও কুয়েতে শহিদুল ইসলাম পাপুলের টাকায় কোনো কাজ হচ্ছে না। কুয়েত আদালত মানবপাচার ও ভিসা জালিয়াতিসহ কয়েকটি অভিযোগে তার বিচারের রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য্য করেছে। বাংলাদেশে বসে পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম বাগড়াম্বর করলেও তাকে কোনো কাজ হচ্ছে না। এখন কুয়েত কারাগারের চার দেয়ালের ভিতরে বসে রায় শোনার জন্য প্রহর গুনছেন টাকার কুমির খ্যাত লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহীদ ইসলাম পাপুল। কুয়েতের দৈনিক পত্রিকা আল-কাবাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহিদুল ইসলাম পাপুলেরর মামলার রায় ২৮ জানুয়ারি ধার্য করেছেন দেশটির একটি আদালত। গত বৃহস্পতিবার আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল-ওসমান দিন অভিযুক্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এ দিন ঠিক করে দেন।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কুয়েতের অপরাধ আদালতের কাউন্সেলর আব্দুল্লাহ আল-ওসমানের আদালতে পাপুলের বিচার শুরু হয়। সেদিন জামিন আবেদন নাকচ করে পাপুলকে কারাগারে পাঠিয়ে পহেলা অক্টোবর অভিযোগ শুনানির পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছিল আদালত। এর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ ইন্তেকাল করলে আদালতের কার্যক্রম স্থগিত হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের সমাপনী যুক্তিতর্ক শোনে বিচারক মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আলোচিত এমপি শহীদ ইসলাম পাপুলকে গত ৬ জুন মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে উঠে আসে কীভাবে বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্য মানুষকে প্রতারিত করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এই অনৈতিক কাজে তাকে কুয়েতের প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ, উপহার ও অন্যান্য সুযোগের বিনিময়ে সহায়তা করেছেন।
মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক ল²ীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন পাপুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, মানবপাচার, ঘুষ বিনিময় ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে। পাপুলের সঙ্গে অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছেন কুয়েতের দুজন সংসদ সদস্য সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি ও সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদ। গ্রেপ্তারের পর কার্যত: দফায় দফায় ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় এমপি পাপুলকে।
বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ‘ঘুষ নিয়ে’ অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি বরখাস্ত মেজর জেনারেল মাজেন আল-জাররাহও রয়েছেন অভিযুক্তদের মধ্যে।
আল-কাবাসের খবরে বলা হয়, পাপুলের বিষয়ে অভিযোগ তদন্তের সময় অভিযুক্ত হিসাবে ১৩ জনের নাম উঠে আসে। এর মধ্যে থেকে চারজনকে তদন্তকালে বাদ দেওয়া হয়। পাপুলের সঙ্গে অপকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠায় সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাসে কর্মরত রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদকে প্রত্যাহার করে আনা হয়।
তিন যুগ আগে সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য। বাংলাদেশেও গত ১১ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে শহীদ ইসলাম পাপুল, স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)।
এদিকে গ্রেফতারের পর পরই পাপুলের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঁচ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার বা বাংলাদেশি টাকায় ১৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ টাকা জব্দ করা হয়েছে। কুয়েত আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দেশটির আইন অনুযায়ী অর্থপাচারের জন্য ৭ বছরের সাজা হবে। সেই সাথে মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। আর সেক্সুয়াল মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদন্ড।