গরু চুরি মামলার আসামিকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে হাজির না করা এবং পুলিশ হেফাজতে বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে বলে আদালতের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন আশরাফুল ইসলাম (৪২) নামে এক আসামি। ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধি দিতে এসে পুলিশের নির্যাতনের কথা আদালতের সামনে তুলে ধরেন ওই আসামি। আর এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছেন আদালত।
এতে ইবি থানায় করা ওই গরু চুরি মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে তদন্তসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত বৃহষ্পতিবার (১২ নভেম্বর) কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক মো. মহসিন হাসান এই আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার আসামি আশরাফুল আদালতের কাছে দেয়া আরজিতে লিখেছেন, ‘গত ৮ নভেম্বর, ২০২০ গভীর রাতে আসামি সদর উপজেলার আব্দালপুর মাঠ পাড়ার বাসিন্দা মৃত: নায়েব আলী মন্ডলের ছেলে আশরাফুলকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সেখানে একটি কক্ষের মধ্যে ঢুকিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে এবং চোখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গিরায় গিরায় পিটুনি দেয়। এতে শারীরিক ভাবে বিভিন্ন অঙ্গ নীলাফোলা হয়ে গুরুতর আহত হয়।’
‘পরে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে পুলিশের শেখানো কথা আদালতে স্বীকার করতে চাপ দেয়। এই অবস্থায় ৩৬ ঘণ্টা পর গরু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।’
এ সময় আসামির দেয়া জবানবন্ধির সঙ্গে শারীরিক অবস্থার বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে আদালত তাৎক্ষণিক আসামির শারীরিক ও ডাক্তারি পরীক্ষা করতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া ডাক্তারি সনদে আসামিকে শারীরিক নির্যাতনের সত্যতা নিশ্চিত হন আদালত।
সোমবার আদালত থেকে উত্তোলিত মামলার নথিপত্রের সার্টিফাইড কপিতে আদেশ নামায় যা লেখা আছে
‘এই মামলার আসামি তথা ভিকটিমের বিবৃতি, মেডিকেল সনদ ও নথি পর্যালোচনায় আসামিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আছে বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়’।
‘সুতরাং উপরিউক্ত বিষয়টির আলোকে পুলিশ সুপার কুষ্টিয়াকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করছে। আদেশের কপিসহ আসামি মো. আশরাফুল ইসলামের দেয়া বিবৃতি ও চিকিৎসক থেকে দেয়া জখমী সনদ পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া বরাবর প্রেরণ করা হোক।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তাপস কুমার সরকার বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার ইবি থানাধীন পশ্চিম আব্দালপুর মাঠপাড়া গ্রামের মৃত: নায়েব আলী মন্ডলের ছেলে আশরাফুল (৪২) কে সদর কোর্টের জিআরও এএসআই স্বপন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে মারপিটের দাগ রয়েছে। হাটু গোড়ালির সংযোগস্থল ইনজুরি আছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইবি থানার উপ-পুলিশ কর্মকতা আব্দুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘আমার হেফাজতে কোনো আসামিকে নির্যাতন করা হয়নি। আসামি আশরাফুলের ডাক্তারি পরীক্ষায় যদি নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পায় তাহলে আমি অভিযোগ মাথা পেতে নেবো।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত বলেন, ‘এ সংক্রান্ত আদালতের কোনো নির্দেশনা আমার কাছে আসেনি। নির্দেশনা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’